মাননীয় নৌ-পরিবহনমন্ত্রী সর্ব প্রথম অামার অান্তরিক সালাম নিবেন। মাননীয় মন্ত্রী ২০১৪ ইং সালের আগস্ট মাসে পদ্মা নদীর কাওড়া কান্দি পাড়ে লঞ্চ ডুবে যায়, সেখানে বাবা-মা, ভাই-বোন সমতুল্য অনেক মানুষ মারা যায়, হয়েছে অনেক নিখোঁজ। মাননীয় মন্ত্রী লঞ্চ ডুবে মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পায়নি অাপনার তিন ভাগ্নীও!
তখন স্বজনদের অাহাজারী অার কাঁন্নায় পুরো পদ্মা নদীর কাওড়াকান্দি ভারী হয়ে যায়, কেঁদেছে দেশের মানুষ, অাকাশ ভারী হয়ে যায়, সকলের নজর ছিল পদ্মা নদীর পাড়ে, পুরো বিশ্ব দেখেছে, এমন কি অামিও কেঁদেছিলাম। অাপনার ভাগ্নীরা
লঞ্চে ওঠার পূর্বে একটি সেলফিও তুলেছিল যেটা মিডিয়া ও প্রিন্ট পত্রিকায় ব্যাপক হারে প্রচার হয়েছিল মন্ত্রীর ভাগ্নী হিসেবে, সে কারনে সকলের নজর ছিল তাদের দিকে।
সেদিন কিন্তু আপনার কাঁন্না দেখে সারা দেশের মানুষ কেঁদেছিল। আপনার তিন ভাগ্নীর মধ্যে সম্ভবত একজনের লাশ পাওয়া গিয়েছিল। (২৯ জুলাই) শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী ছাত্র/ছাত্রী বাস চাঁপায় মারা গিয়েছে, তারাও ঠিক আপনার ভাগ্নীদের
বয়সি। মাননীয় মন্ত্রী কেন সেদিন কেঁদেছিলেন? জনগণ নয়! অবশ্যই অাপনার ভাগ্নীদের জন্যই কেঁদেছিলেন।
অথচ দুই শিক্ষার্থী বাস চাঁপায় কাঁন্নার জায়গায় আপনার হাসি মুখটা দেশের জনগণ নিরহ মানুষ ও খেটে খাওয়া দিন মজুরী মানুষ যাদের ভোটে মন্ত্রী হয়েছেন, তারা দেখতে চায়নি! হয়তো এটাকে নিছক দুর্ঘটনা বলেই চালিয়ে দিচ্ছেন অথবা মন্ত্রিত্ব হাসি হাঁসছেন! তাহলে সেদিন কেন কেঁদেছিলেন? মাননীয় মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর শোকে তাদের স্বজনরা ও তাদের সহপাঠি শিক্ষার্থীরা হাউ মাউ করে কাঁন্না দেখে অাপনার একবারও কাঁন্না অাসে নাই কেন! ভাগ্নীরা নেই তাই কি?
সেদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আপনার হাসি মুখে অবান্তর উত্তরের সাথে বলেছিলেন, আজ সড়ক দূর্ঘটনায় মাত্র তিনজন মারা গেছে, ত্রিশজন তো মরে নাই! ভারতে ৩৩ জন মারা গেছে, ওখানে তো কেউ কিছু বলেন না! এখানে শুধু লাফালাফি! তারপর অট্টহাসি। আমি নির্বাক, স্তম্ভিত, স্তব্ধ হই- লেখার ভাষা হারিয়ে ফেলি।
কারন একজন মন্ত্রী সর্বাচ্চ পদে থেকে এমন অবান্তর কথা সোভা পায় কি করে! এখানে ভারতের উদাহরণ কেন অাসবে, এটা কি ভারতের অঙ্গরাজ্য? ভারত হল হিন্দু রাষ্ট্র। এ নিয়ে ছাত্র সংগঠন সহ অন্যরা অাপনার পদত্যাগ চেয়েছে।
মাননীয় মন্ত্রী (গত ৩০জুলাই) সচিবালয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় অাপনি বলেছেন, অামি পদত্যাগ করলেই সব সমস্যা সমাধান হবে না। এর অাগেও শহীদ মিনার থেকে অনেকে অামার এবং তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন, কিন্তু পদত্যাগ সমস্যার সমাধান নয়। “রাইট” অাপনার কথাটাই রাইট ধরে নিলাম।
যে, জনগণ ভোট দিয়ে শরীরের ঘাম বিসর্জন করে অাপনাদেরকে সরকারে বসায়, সে জনগণ অাবার অাপনাদের পদত্যাগ চাইবে কেন? সেটা ভেবে দেখার অাপনাদের সময় এসেছে।
অাপনার অবান্তর কথায় ছাত্র সমাজ ও রাজনৈতিক অঙ্গনসহ দেশের সকল মানুষ কষ্ট পেয়েছে (অার এরকম বেফাঁস কথা বলার কারনেই অাপনাদের পদত্যাগের দাবি তোলে)। অাপনাদের একটা কথায় গোটা জাতি ও ছাত্র সমাজ খুশীতে অত্মহারা হয়ে যাবে। সেখানে ছাত্র সমাজ ক্ষিপ্ত হবে কেন? অাবার ছাত্রদের শান্তিপূর্ন হরতালে পুলিশ বাহিনী শিক্ষার্থীদেরকে গনহারে পিটাচ্ছে, এটা কেমন অাচারন! অাপনারা ভাল হলে, প্রশাসন ও জনগণ এবং ছাত্র সমাজও ভাল হবে, এটা যুক্তিসঙ্গত কথা।
মাননীয় মন্ত্রী অাসলেই বাস চালকরা বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালায়, গাড়িতে উঠার পূর্বে মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে চলাচল করতে হয়, যেটা অাপনারা নাও জানতে পারেন। কারন অাপনাদের গাড়ি চালকরা অাপনাদের ভয়তে শান্তভাবে গাড়ি চালায়! অাপনি তাদেরকে কিছু বলুন? শাস্তির ব্যবস্তা করুন? দেখবেন জনগণ এমনিতেই ভাল হয়ে যাবে। র্যাব সদস্য বলছে অাটককৃত তিন বাস চালকের এক জনেরও গাড়ি লাইন্সে নেই! তবে- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই, কারন তিনি দায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেষ দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের খুনী বাস চালক মাসুমবিল্লাহ,’ সোহাগ অালী ও জোবায়েরকে গ্রেফতার করেছেন।
মাননীয় মন্ত্রী, নায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চন “নিরাপদ সড়ক চাই” সংগঠন দিয়ে তার একার পক্ষে সড়কের যানজট নির্মূল ও চাকল শায়েস্তা কিছুই করতে পারবেনা। এক মাত্র অানাদের দূরন্ত ভূমিকা ও ট্রাফিক পুলিশ এবং অন্যান্য বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া। যদিও অাপনি (গত ৩১জুলাই) ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের এক অনুষ্ঠানে অান্তরিক ভাবে দূঃখ প্রকাশ করেছেন, কিন্তু তাতে জাতি, জনগণ ও ছাত্র সমাজ শান্ত কিনা সেটা সময়ে বলে দিবে।
ছাত্র সমাজ, ছাত্রদের ও ছাত্র সংগঠনের
ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলো মেনে নিন, ছাত্র অান্দোলন কিন্তু ভয়াবহ, সেটা ইতিহাস পর্যালোচনা করলে প্রমানিত। পরিশেষে অামার লেখায় কোন কষ্ট পেলে ছেলে হিসেবে ক্ষমা করে দিবেন।
প্রসঙ্গ: শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী (গত ২৯ জুলাই) জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের প্রতিযোগিতায় নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। অাহত হয়েছেন অারও ১৪ জন।
Leave a Reply