চলতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই জেলে পল্লী গুলোতে ফুঁটে ওঠে খুশির ঝলক। তাঁজা ইলিশের গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠে গোটা সাগর উকূলীয় চরাঞ্চল। পাল্টে যায় জেলে পরিবারের দূর্দশার চিত্র।
স্বচ্ছলতা ফিরে আসে জেলে পরিবার গুলোতে। কিন্তু এ বছর জেলে পল্লীতে ভিন্নরূপ দেখা গেছে। চলমান বর্ষা তথা ইলিশ মৌসুমে সাগর থেকে শূন্যহাতে ফিরছে জেলেরা।
ইলিশের বদলে দাদনের দায় নিয়ে তীরে ফিরছে একাধিক জেলে। ফলে উপকূলের জেলে পল্লী গুলোতে নেমে এসেছে হতাশার কালো আবাস।
চলমান বর্ষা মৌসুম। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা সহ বঙ্গোপসাগর ঘিরে কয়েক হাজার জেলের বসবাস। অন্যান্য পেশার তুলনায় এই অঞ্চলে জেলে, জেলে শ্রমিক,তথা মৎস্য ব্যবসায় মানুষ অনেক বেশি।
বলতে গেলে এই অঞ্চলটি ইলিশ তথা মৎস্য আরত হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এই উপজেলা থেকে রপ্তানী হয়ে থাকে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
গোটা ইলিশ মৌসুমে উপজেলার বেশ কয়েকটি মৎস্য পয়েন্টে চলে ইলিশ কেনা-বেচার হয়। সাধারন মানুষ অন্যন্য কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে এই কাজে নিয়োজিত হয়ে থাকে। প্রতিবছরের মত এবার তেমনটাই হয়েছে।
কিন্তু জেলেদের আশা নিরাশ করে দিয়েছে ইলিশ শূন্য সাগর। জেলেরা মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে মাছ শিকারের আশায় সাগরে গমন করলে ও মাছ না নিয়ে ফিরছে তারা। ইলিশ মৌসুমে ইলিশের আকাল জেলেদেরকে হতাশ করে দিয়েছে।
একদিকে মহাজনের কাছ থেকে নেয়া দাদন টাকা পরিশোধের চিন্তা আরেক দিকে পরিবারকে দেখভাল করার চিন্তা। এই দুই দুঃচিন্তা জেলে পল্লীতে অশহনীয় আবাস নিয়ে এসেছে।
এই মৌসুমে জেলে পল্লী গুলোতে ইলিশ নিয়ে মহাকর্মযজ্ঞের রূপ এবার ভিন্ন রূপে পরিনত হয়েছে।
এমনটাই জানায় রাঙ্গাবালী উপজেলার একাধিক জেলেরা।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি স্লুইসঘাট এলাকার জেলে মো: আনছার মাঝীর সাথে। তিনি জানান, ‘জাটকা নিধন বন্ধ করার জন্য সরকার অবরোধ ঘোষণা করে। কিন্তু অবরোধের সময় মৎস অফিস ও কোষ্টগার্ডের লোকদের টাকা দিয়া জাটকা শিকার করছে প্রভাবশালীরা।
যার ফলে এ বছর জেলেরা সাগরে গিয়ে ইলিশ পচ্ছেনা। আগামী দিন গুলোতে ও পর্যাপ্ত মাছের আশা করা যাচ্ছেনা। তিনি আরো বলেন, মহাজনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা দাদন এনে জালের সাবার করেছি। জালে মাছ না পরলে ঋণের টাকা পরিশোদ করমু কি দিয়া। ঋণ নিয়ে জেলেদের দাদন দেয়া হয়েছে।
ইলিশ ব্যাবসায়ীরা বলেন,আমরা দাদান দিয়েছি জেলেদের। আর যদি
সাগরে জেলেদের জালে মাছ না পরে ঋণের বোঝা বইতে হবে আমাদের কে। এমনকি পেশা ছাড়তে বাধ্য হবে অনেক জেলে।’
রাঙ্গাবালী উপজেলার ফুলখালী অধিবাসী আ: অদুদ জানান, ‘১৪ লাখ টাকা ব্যায় করে ইলিশের সাবার করছি। এরমধ্যে ৯ লাখ টাকা আমার নিজের ছিল, বাকি ৫ লাখ টাকা এক দাদনদারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ইলিশের বোট সাগরে নামাইছি। ভাবছিলাম মৌসুমের শুরুতে সাগরে অনেক মাছ পরবে। সে আশায় ট্রলার নিয়ে সাগরে জাল ফেলে, যে মাছ পেয়েছি তাতে ট্রলারের খরচই উঠেনি। এভাবে আর কয়েক দিন চলতে থাকলে সাগরে একটা জেলেকেও খুঁজে পাওয়া যাবেনা।’
রাঙ্গাবালী উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মো: মোসলেম উদ্দিন খাঁন জানান, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইলিশের মওসুম পাল্টিয়েছে। তাই এখন সাগরে মাছ কম পরছে। আশা করছি আগমী মাসের শুরুর দিকেই ইলিশের দেখা মিলবে।’
Leave a Reply