সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ভরা মৌসুমেও চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। দাম বৃদ্ধির জন্য মিল মালিক সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। উৎপাদন ও সরবরাহের সঙ্গে যে কোনও পণ্যের দাম কমা-বাড়ার সম্পর্ক কিন্তু চালের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে ভিন্ন এক চিত্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে রেকর্ড পরিমাণ চারের মজুত রয়েছে। যে পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে তা আগামী জুন পর্যন্ত চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত। এরপরও বাড়ছে চালের দাম। চালের বেশিরভাগই চলে গেছে সিন্ডিকেটের কব্জায় বলে জানায় এই সূত্রটি। এর সঙ্গে জড়িত হয়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ী, মিলার, আড়তদার, পাইকারসহ অনলাইন ব্যবসায়ীরা।
দেশে চালের সবচেয়ে বড় বাজার কুষ্টিয়ার খাজানগর। গত কিছুদিন ধরেই এই মোকামসহ অন্যান্য মোকামেও চালের দর বাড়তি। চালের ব্যাপক মজুত গড়ে করেছেন তারা। নিজেদের গ্রাহকদের চাহিদামতো বাড়তি দামে সরবরাহ করছেন। এতে সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় একটি পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ চলে এসেছে। ফলে তারা পরিকল্পনামাফিক চালের দাম বাড়াতে পারছেন।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক বছরে চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। বেসরকারি হিসাবে বেড়েছে ১৪ শতাংশ।
সংস্থাটির প্রতিদিনের বাজারদরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাজারে এখন প্রতি কেজি মিনিকেট চাল সর্বোচ্চ ৬৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ৫৮ টাকা।প্রতিবছর ভর মৌসুমে চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত কমে। এবার কমেনি। বরং বেড়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে ৪ কোটি ৪ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৫০ লাখ টন। এর বিপরীতে উৎপন্ন হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ টনের বেশি।
অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ লাখ টন বেশি পাওয়া গেছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ২৯ লাখ টন। আউস ও বোরো বাবদ জুনের মধ্যে আরও আড়াই কোটি টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। একই সময়ে সাড়ে ৪ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত অর্থবছরের উদ্বৃত্ত হয়েছে ৩০ লাখ টন। এসব মিলে চলতি অর্থবছরে খাদ্যের সরবরাহের লাইনে আছে ৪ কোটি ৬৮ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে চালের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ৩ কোটি টন। এ হিসেবে উদ্বৃত্ত থাকছে ১ কোটি ১৮ লাখ টন।
নিম্ন আয়ের বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, করোনার বিপর্যয়ে আমরা এমনিতেই কাজকাম পাচ্ছি না। তার ওপর আবার চালের দাম বাড়ছে। চালের দাম বৃদ্ধি হলেও আমাদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে না। চালের দাম আরও বাড়লে ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনাহারে থাকতে হবে।
তারপরও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে এই ভরা মৌসুমেও রাড়ছে চালের দাম। চালের এই বাড়তি জনগণের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।
Leave a Reply